বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুরে নির্মিত পার্ক অফিস ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে ড. তপন কুমার দে, প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্য


সম্মানিত সভাপতি, জনাব মোঃ ইউনুস আলী, প্রধান বন সংরক্ষক, বাংলাদেশ

আজকের অনুষ্ঠানের মাননীয় প্রধান অতিথি, আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিজ্ঞানী ও বীর চট্টলার কৃতি সন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এম.পি। অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত বিশেষ অতিথি জনাব আলহাজ্ব এডভোকেট রহমত আলী, এম.পি, সভাপতি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। যিনি শারীরিক অসুস্থতার কারনে অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেননি। বিশেষ অতিথি জনাব মোঃ আ. ক.ম মোজাম্মেল হক এম.পি, সভাপতি, ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিশেষ অতিথি জনাব মোঃ শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, মাননীয় সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। বিশেষ অতিথি জনাব মোঃ নুরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক, গাজীপুর।

বিশেষ অতিথি জনাব ইকবাল হোসেন সবুজ, উপজেলা চেয়ারম্যান, শ্রীপুর উপজেলা, গাজীপুর।

প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ

বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ ও এলাকাবাসী

এবং উপস্থিত সূধীবৃন্দ সবাইকে আমি সাফারী পার্কের আগমনের উষ্ণ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সসূধীবৃন্দ

আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুরে নির্মিত পার্ক অফিস ভবন এর শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বিধায় আমরা আনন্দিত।

ভাওয়াল গড়ের শালবন ঐতিহাসিক ভাবে জীব-বৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল। ছোট ছোট টিলা (চালা) ও নীচু ভূমি (বাইদ) সমৃদ্ধ শালবনে দেখা যেত আমলকি, বহেড়া, হরিতকী, করই, শিমূল, হলদু, পলাশ, চাপালিশ, কুসুম, পিতরাজ, উদাল ইত্যাদি বৃক্ষরাজিসহ মায়া হরিণ, চিতাবাঘ, বন বিড়াল, গন্ধগকুল, শিয়াল, সজারু, অজগর, বানর, হনুমানসহ অসংখ্য প্রজাতির পাখি। শালবনে প্রায় ৬৩ প্রজাতির গাছপালা ও ২২০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেখা যেত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, শিল্পায়ন, বন ধ্বংস করে কৃষি জমির বিস্তার, আবাসন, জবরদখল ও ভূমি বিরোধের কারনে শাল বনের অস্তিত্ব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর অতি নিকটে নীরবতা খুজে নেয়ার জন্য পিকনিক ও পর্যটনের জন্য ছুট আসত এ বনাঞ্চলে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি নগরায়ন, শিল্পায়নের কারনে ক্ষয়িষ্ণ এ বনাঞ্চলকে সুরক্ষার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রনয়নের মাধ্যমে দেশের সর্বপ্রথম ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল জাতীয় উদ্যানটিকে চিত্ত বিনোদন , শিক্ষা ও গবেষণা সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রের রূপান্তর করবেন। কিন্তু এখনও আমরা সে অবিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে পারিনি।

রাথুরা বনাঞ্চলটি আমার পরম শ্রদ্ধেয় প্রয়াত শিক্ষক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও ড. আলী রেজা খাঁনসহ ১৯৭৭ সালে একাধিকভাবে এসেছিলাম তাবু খাটিয়ে বন্যপ্রাণী গণনা করতে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব, ড. মিহির কান্তি মজুমদার ২০১০ সালে একবার প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহ্মেদের নুহাশ পল্লীতে এসে রাথুরা বনাঞ্চল ঘুরে দেখেন। আমরা ৮ মাইল পথ অতিক্রম করে পায়ে হেটে নুহাশ পল্লী থেকে ইন্দ্রপুর আসি। আমি ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে এ বনের যে বৈচিত্র্যতা দেখেছি এখন সব হারিয়ে যাচ্ছে। সচিব মহোদয় তাৎক্ষণিকভাবে আমাকে জাতীয় উদ্যান অথবা সাফারী পার্ক গড়ে তোলার জন্য প্রকল্প দাখিলের নির্দেশনা দেন। আমি সাফারী পার্ক প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবনা তৈরী করি। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন মাওনা ইউনিয়নের বড় রাথুরা মৌজা ও সদর উপজেলার পীরুজালী ইউনিয়নের পীরুজালী মৌজার খন্ড খন্ড শাল বনের ৪৯০৯.০ একর এর মধ্যে ৩৮১০.০ একর এলাকাকে সাফারী পার্কের মাস্টার প্ল্যানের আওতাভূক্ত করা হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এম.পি মহোদয়ের বলিষ্ট নেতৃত্বে ও দিক নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১০ সালে ৬৩.৯৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং পার্ক প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০১১ সালের ২ ফেব্র“য়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুর এর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের শুরুতে কোন মাষ্টার প্লান প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে স্পেস ও গৃহায়ন লিমিটেড পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক মানের সাফারী পার্কে উন্নীত করার লক্ষ্যে একটি মাষ্টার প্লান তৈরী করা হয়। মাষ্টার প্লানে বর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও ভূমি অধিগ্রহনের জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে ৪ অক্টোবর ২০১১ তারিখে ’’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুর (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি মার্চ ২০১০ হতে জুন ২০১৪ সময়ের জন্য একনেক কর্তৃক বর্ধিত আকারে ২১৯.৮৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়।

সাফারী পার্কটি দক্ষিণ এশীয় মডেল বিশেষ করে থাইল্যান্ডের সাফারী ওয়ার্ল্ড এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারী পার্কের কতিপয় ধারনা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। সাফারী পার্কের চারদিকে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী ঘেরাা এবং উহার মধ্যে দেশী/বিদেশী বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে পর্যটকগণ চলমান যানবাহনে অথবা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করে শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ লাভ করবেন। সাফারী পার্কের ধারনা চিড়িয়াখানা হতে ভিন্নতর। চিড়িয়াখানায় জীবজন্তুসমূহ আবদ্ধ অবস্থায় থাকে এবং দর্শনার্থীগণ মুক্ত অবস্থায় থেকে জীবজন্তু পরিদর্শন করেন। কিন্তু সাফারী পার্কে বন্যপ্রাণীসমূহ উন্মুক্ত অবস্থায় বনজঙ্গলে বিচরণ করবে এবং মানুষ সতর্কতার সহিত চলমান যানবাহনে আবদ্ধ অবস্থায় জীবজন্তুসমূহ পরিদর্শন করবেন।